Prince Ahmed

আমার লেখালেখি

লেখার বিভাগ

নীলা দি,
আজ সকাল থেকেই মনটা খারাপ, কিছুই ভাল লাগছে না। নীলা দিদি, কেমন আছ তুমি? কেন জানি আজ বারবার তোমার কথা মনে পড়ছে। আজ এই ইট, সিমেন্ট আর মিথ্যা কথার শহরের উঁচু ভবনের জানালার ধারে বসে ভাবি, আসলে তুমি আমাকে কত ভালবাসতে দিদি, আমি তোমার ভালোবাসার মূল্য বুঝতে পারিনি। আমি আসলে তখন ভালোবাসা বলতে সুন্দর চেহারা, সুন্দর শরীর, সুন্দর চোখ, ফর্সা রঙ মনে করতাম। দিদি আমি তখন বুঝতাম না ভালোবাসা কি? মন কি? তুমি হিন্দু মেয়ে বলে আমি তোমাকে ভালবাসতে পারিনি দিদি, তোমার কালো শরীর দেখে আমি তোমাকে ভালবাসতে পারিনি দিদি, তোমার ডোবা চোখ, পুরু ঠোট দেখে আমি তোমাকে ভালবাসতে পারিনি দিদি। আমি ক্লাসে যখন মেম্বরের মেয়ে পলির দিকে তাকিয়ে থাকতাম, তখন তোমার চোখের ঐ জলের ভাষা আমি বুঝতে পারিনি দিদি। আজ আমি সব বুঝি দিদি । আজ আমি ভালোবাসা বুঝি, আজ আমি মন বুঝি, আজ আমি বুঝি আমার থেকে এক বছরের বড় হিন্দু একটা কালো মেয়েকে পাগলের মতো ভালোবাসা যায় । কিন্তু আজ আমি তোমার কাছে আসতে পারিনা। তুমি পাহাড় সমান ভালোবাসা আমার জন্য রেখে গেছ তার একটা ছোট্ট কণা ও যদি আমি তোমাকে দিতে পারতাম! গ্রামের একটা কালো মেয়ে হয়ে এতো ভালোবাসা তুমি কি করে শিখেছিলে দিদি ? আজ মন থেকে বলছি, আমি তোমাকে ভালোবাসি দিদি। তুমি তো আর আমার কাছে আসবে না, তাই আমিই তোমার কাছে আসব। আজ আর লিখব না, আমার খুব কান্না পাচ্ছে আজ। দিদি, তুমি যেদিন বিষ খেয়ে মারা গেলে তার আগের দিন সন্ধ্যায় আমাদের গোয়াল ঘরের পাশে আমাকে জড়িয়ে ধরে কি কান্নাটাই কেঁদেছিলে তুমি। তোমার ঐ দিনের কান্নার কথা আমি কোনদিন ভুলবো না দিদি। তোমার ঐ শেষ একদিনের কান্নার বিনিময়ে আমি তোমার জন্য সারাজীবন কাঁদবো দিদি।


ইতি
তোমার রাজপুত্র
Read More »

এক. 
সন্ধ্যার দিকে টিএসসি থেকে শাহবাগ রাস্তাটায় বেশ ভিড় হয়বিশেষ করে চারুকলা ও পাবলিক লাইব্রেরির সামনে চটপটি ও ফুসকার লোভে লোকজন ভিড় জমায়। ভিড় এড়ানোর জন্য ইমুকে নিয়ে কবি নজরুল ইসলামের মাজার ঘেষে ফুটপাথ দিয়ে হেটে আসছিলাম। ইমু আমার স্ত্রী, চার বছর প্রেমের অনার্স শেষ করে এক বছর হলো আমরা বিয়ে করেছি শুক্রবার ছুটির দিন তাই ইমুর অনুরোধে আজ টিএসসিতে বেড়াতে এসেছিলাম। বর্তমানে ইমু প্রেগনান্ট ওর হাটতে কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পেরে বললাম চলো- পাবলিক লাইব্রেরির সামনে গেলেই রিকশা পাবো, ইমু আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বললো সমস্যা নেই- আমি হাটতে পারবো 
-
তোমার কষ্ট হচ্ছে না? 
-
তোমার সন্তান বহন করতে আমার কষ্ট হবে এটা ভাবলে কি করে?
তোমার সন্তান কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই মুগ্ধ দৃষ্টিতে ইমুর দিকে তাকালামওকে ভালোবেসে আমি সুখী। আমার সন্তান পেটে বহন করছে এটা ভাবতেই খুব ভালোবাসতে ইচ্ছা হলো ওকেবাম হাত দিয়ে ইমুর কোমরটা আলতো করে পেচিয়ে ধরে হাটতে থাকলাম। ইমু কেমন একটা মায়াভরা দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকালোতারপর ওর ডান হাত দিয়ে আমাকে ও পেচিয়ে ধরলো। হাটতে লাগলাম আমরা, হাটতে হাটতে আমরা চারুকলা ইন্সটিটিউটের সামনে চলে এলামখালি রিকশা পাওয়ার জন্য রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছিঠিক সেই সময় সাদা রঙের একটা প্রাইভেট কার এসে থামলো আমাদের সামনেগাড়ি থেকে লম্বা চুলওয়ালা একটা লোক বেরিয়ে এসেই জড়িয়ে ধরলো আমাকে,কিছু বুঝতে না পেরে বোকার মতো লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার পর চিনতে পারলাম তাকেআমার বন্ধু খালেদ। চারুকলায় পড়তোএখন কি করে জানি নাঅনেক দিন যোগাযোগ নেই খালেদ একবার আমার ও ইমুর দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো
-
কি করছিস এখানে? ঠোট টেনে হালকা হাসার চেষ্টা করে বললাম ইমুকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলামএখন যাওয়ার জন্য রিকশা খুজছি। 
-
এখন চলে যাবি কেনভাবীকে নিয়ে বেরিয়েছিসআর কিছুক্ষণ থেকে যা। 
-
ইমু অসুস্থ
খালেদ ইমুর দিকে একবার তাকিয়ে কি বুঝলো জানি না বললোআচ্ছাঠিক আছে চল আমি পৌছে দিয়ে আসি।
-
নানাতোকে কষ্ট করতে হবে না রিকশা নিয়েই চলে যাই।
- 
শালা ! আমার কষ্ট হবে মানে ? বলেই ইমুর হাত ধরে টেনে গাড়ির দরজা খুলে বললো -বসুন ভাবী।
ইমু কি করবে বুঝতে না পেরে আমার দিকে অসহায়ের মতো করে তাকালো। আমি মাথা নেড়ে ইশারায় ইমুকে বসতে বললাম ,ইমু ভেতরে গিয়ে বসলো। গাড়ির সামনের দরজা খুলে আমিও খালেদের পাশে বসলাম ,খালেদ জিজ্ঞাসা করল  এখন কোথায় থাকিস ?
-
শান্তিনগর ইস্টার্ন প্লাসের পাশে।
খালেদ গাড়ি স্টার্ট করে আবার জিজ্ঞাসা করলো শান্তিনগরে বাসা কিনেছিস নাকি ভাড়া থাকিস?
-
পাগল হয়েছিসআমার চৌদ্দ গোষ্ঠীর সকল সম্পদ দিয়েও ঢাকায় বাড়ি কেনা সম্ভব?ছোট একটা ফ্যাট ভাড়া নিয়েছি, তুই কি করছিস এখন? 
-
আগের মতোই আছিছবি আকা আর কবিতা লেখা ‍নিয়েকেন জানিস নাগত বই মেলায় আমার কবিতার বই বেশ চলেছেমে মাসে জয়নুল গ্যালারিতে আমার ছবির একক একজিবিশন হবে, একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম ভালো, নিজের ভুবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছিস 
-
তুই কি করছিস এখনকোনো যোগাযোগ তো রাখিসনি, বান্না বলেছিল যে বিয়ে করেছিস
-একটা ফার্মে কমপিউটার অপারেটর হিসেবে ঢুকেছি পাশাপাশি চেষ্টা করছি অন্য জায়গায় ভালো চাকরি পেলে এটা ছেড়ে দেবো।
খালেদ গাড়িটা ফকিরাপুল মোড়ে থামিয়ে পকেট থেকে মার্লবোরো সিগারেটের প্যাকেট বের করলোশুনেছি মালবোরো অভিজাত লোকেরা খায়, তাহলে খালেদের বর্তমান অবস্থা খুবই ভালো খালেদ প্রতিষ্ঠিত এ জন্য ভালো লাগলেও নিজেকে কেমন যেন ছোট ছোট মনে হলো ঘাড় ফিরিয়ে একবার ইমুর দিকে তাকালামইমু মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে, খালেদ সিগারেটের প্যাকেটটা আমার দিকে এগিয়ে ধরে বললো- চলে ?
আমি মাথা নেড়ে না বললামখালেদ একটা সিগারেট জ্বালিয়ে পাশের কাচ নামিয়ে ধোয়া ছেড়ে আবার চালাতে শুরু করলো, ইমুসিগারেট পছন্দ করে না,  সিগারেটের গন্ধও নাকি সহ্য করতে পারে না আবার ইমুর দিকে তাকালাম নাক চেপে বসে আছে, ওর চোখ দেখে খুব অসুস্থ বলে মনে হলো ইচ্ছা হচ্ছিল খালেদকে বলি যেসিগারেটটা আমাদের নামিয়ে দেয়ার পর খাস, কিন্তু তার গাড়িতে চড়ে তাকে সিগারেট খেতে নিষেধ করার সাহস আমার হলো না শান্তিনগর ইস্টার্ন প্লাসের সামনে গাড়ি থেকে নামলাম খালেদকে বললাম  চল এক কাপ চা খেয়ে যাস। খালেদ বলল- না আজ না, অন্য একদিন আসব। আমি ইমুকে নিয়ে রুমে ঢুকলাম। রুমে ঢুকেই ইমু প্রশ্ন করল ওই লোকটা তোমার কেমন বন্ধুবললাম কলেজে আমরা একসঙ্গে পড়তাম মোটামুটি আমার ভালো বন্ধু।ইমু বলল-  ওনাকে কখনো আমাদের বাসায় আসতে বলবে না
-কেনখালেদ তো খুব ভালো ছেলে, ও খুব ভালো ছবি আকে তুমি তো আর্টিস্টদের খুব পছন্দ করো তাছাড়া ও কবিতাও লেখে
-লিখুক ও রকম লম্বা চুলওয়ালা লোকেদের আমার ভালো লাগে না, আর সিগারেট খাওয়া লোক আমি সহ্যই করতে পারি না
-
খালেদ সিগারেট খেলে তোমার সমস্যা কিআমি তো খাচ্ছি নাতুমি অসুস্থ শুনে যে গাড়িতে করে রেখে গেল, তাকে তুমি সহ্য করতে পারছো না। 
-
অসুস্থ বলে নয়, আমাকে স্পর্শ করার লোভেদেখলে নাআমার হাত ধরে কেমন সুন্দর করে গাড়িতে ওঠালো পরের বউয়ের হাত ধরে যে সে আবার ভালো হয় কেমন করে?
 বুঝলাম ইমুর সঙ্গে পারবো না, আসলে ও আমাকে খুব বেশি ভালবাসে তো তাই ? শেষ পর্যন্ত ইমুর কাছে হার মেনে বললাম আচ্ছা খালেদকে বাসায় নিয়ে আসবো না।


    দুই.


আজ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছিগতকাল আমাদের একটা মেয়ে হয়েছে। পরিচিত অনেকেই দেখতে আসছে এজন্য আজ সারাদিন বাসায় থাকতে হবে। সকালের দিকে একজন মেয়ে দেখে আমার কাছে এসে বললো মেয়ে দেখতে ঠিক আপনার মতো হয়েছেমেয়েটা আমার মতো হয়েছে শুনে কি যে ভালো লাগছে সেটা যারা বাবা হয়েছে শুধু তারাই বুঝতে পারবে।দুপুরের দিকে কলিংবেলের শব্দ শুনে দরজা খুললাম খুলে দেখি খালেদদুই হাতে বড় বড় দুটো ব্যাগ আমাকে দেখেই বললকনগ্রাচুলেশন!! মেয়ের বাবা হওয়া সৌভাগ্যের বিষয় মিষ্টি হেসে খালেদকে বললাম -ভেতরে আয় 
খালেদ ভেতরে এসে সোফায় বসে ব্যাগ থেকে দুটো দামি শাড়ি বের করে বললো, -এটা ভাবীর জন্য এবং ব্যাগের অন্য সব কিছু তোর মেয়ের জন্য।আমি মনে মনে উপহারগুলোর জন্য বেশ খুশি হয়েছি কারণ এগুলো পেলে ইমু হয়তো খুশি হবেতবুও ভদ্রতা দেখানোর জন্য বললামখামাখা খরচ করে এসব আনতে গেলি কেন?খালেদকে মেয়ে দেখিয়ে নিয়ে এসে বসার ঘরে মিষ্টি খেতে দিলাম  কিছুক্ষণ চুপচাপ কি একটা ভেবে খালেদ আবার বললোদোস্ততোকে একটা কথা বলবোরাখবিবললাম
বলও বললোআমি এখন থেকে তোর বাসায় থাকতে চাইআমার একা থাকতে খুব কষ্ট হয়বিশেষ করে রান্না-খাওয়ার জন্য
আমি জানি ইমু কখনো রাজি হবে না তবুও খালেদকে থাকতে দিতে রাজি হলাম কেন রাজি হলাম তাও জানি না হয়তো বাবা হওয়ার আনন্দে... সপ্তাহখানেক হলো খালেদ আমার বাসায় এসে উঠেছেইমু প্রথমে খুব রাগ করেছিলপরে অনেক বুঝিয়ে রাজি করিয়েছি তবে মজার ব্যাপার হলো ইমু আগে যেমন খালেদকে নিয়ে নেগেটিভ মন্তব্য করতো এখন সেটা আর করছে নাবরং মাঝে মধ্যে বলতে শুনেছিখালেদ ভাই খুব ভালো ছবি আকে আমিও মনে মনে ইমুর ওপর বেশ খুশি হয়েছি কারণ শেষ পর্যন্ত সে খালেদকে বুঝতে পেরেছে,মাস খানেকের মধ্যেই টের পেলাম ইমু ও খালেদের মধ্যে সম্পর্কটা বেশ ফ্রি হয়ে গেছেঅফিস থেকে প্রায়ই রাতে ফিরে দেখতাম খালেদের রুমে বসে ইমু হাসাহাসির গল্প করছেসেটা নিজের কাছে হালকা খারাপ লাগতোতবুও কাউকে কিছু বলতাম না কারণ ইমুকে আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছি দুজনেই পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে নতুন পরিবার গড়েছি ইমু কখনোই আমাকে কষ্টের সাগরে ভাসানোর মতো কিছু করবে না ওর ওপর আমার বিশ্বাসটা প্রচন্ড রকমের বেশিতাছাড়া খালেদও আমার ভালো বন্ধু সেও আমার বিশ্বাস নষ্ট করবে না,একদিন বিছানার চাদরের তলায় একটা কাগজ খুজতে গিয়ে হঠাঃ একটা ছবি পেলাম মোটা আর্ট পেপারে ইমুর নুড ছবিছবির নিচে লেখা তুমি ছবির চেয়েও সুন্দর বুঝলাম ছবিটা খালেদের আকাখালেদ ইমুর এ রকম একটা ছবি একে দিয়েছেঅথচ ইমু আমাকে বলেনি মনে মনে বেশ রাগ হলো ইমুকে বকা দেব বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। ঠিক তখন ইমু আমাদের মেয়ে পুষ্পিতাকে কোলে নিয়ে রুমে ঢুকলোআমার কাছে এসে বললোনাওতোমার মেয়েকে একটু কোলে নাওপুষ্পিতা আমার কোলে এসে আমার গলা জড়িয়ে ধরলোমুহূর্তের মধ্যে মনটা কেমন হয়ে গেল যেন ইমুকে কিছুই বলতে পারলাম না মাঝে মধ্যে ইমু খালেদের গাড়িতে করে বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যায় কেনাকাটা করে অবশ্য এসব কথা ইমু রাতে ফিরলে আমাকে বলে হালকা মন খারাপ হয় কিন্তু কিছু বলতে পারি না খালেদকেও কিছু বলতে পারি না বললে হয়তো আমার সামনে আসবে না বাড়ি ছেড়ে চলেও যেতে পারে 
৩সকাল থেকেই আকাশে মেঘ জমে টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছিল বাসা থেকে বেরোনোর সময় হাতে ছাতা ধরিয়ে দিয়ে ইমু বলেছিল ওগোআজ একটু তাড়াতাড়ি ফিরবে। জিজ্ঞাসা করেছিলাম, -কেন? বলেছিলজানি না তবে বিকালের মধ্যেই ফিরে এসো।
সারা দিন ধরে ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছেদুপুরে খাবার পর থেকে আর কাজ করতে মন বসছে নাইমুর কথা মনে পড়লোতাড়াতাড়ি না ফিরলে আবার রেগেমেগে কথা বলা বন্ধ করে দেবেওর সঙ্গে কথা না বলে আমি আবার থাকতে পারি না। বিকালের দিকেই বেরিয়ে পড়লাম অফিস থেকেবাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এলোকোথাও ইলেকট্রিসিটি নেইআশপাশের দোকানগুলোতে টিপটিপ করে লালচে ল্যাম্পের আলো জ্বলছেরিকশা থেকে নেমে পাশের দোকান থেকে পুষ্পিতার জন্য এক প্যাকেট চিপস কিনলাম।
বাসার দরজার কাছে এসে থমকে দাড়ালামদরজার বাইরে থেকে শিকল লাগানো কিন্তু তালা লাগানো নেইভাবলাম ইমু বাইরে বেরোলে তো দরজায় তালা লাগানোর কথা,তাহলে বাইরে থেকে শিকল লাগালো কেদরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম ঘরের ভেতর প্রায় অন্ধকার চার্জার খুজে আলো জ্বালালাম সঙ্গে সঙ্গে পুষ্পিতা দৌড়ে এসে আমার পা দুটি আকড়ে ধরলোআমি ওকে কোলে নিয়ে চিপসের প্যাকেটটা ওর হাতে দিলামজোরে কয়েকবার ইমুকে ডাক দিলাম কোনো সাড়া নেইচার্জারের আলোয় কিচেনবাথরুম ও খালেদের রুমে দেখলাম না কোথাও ইমু নেই ,পুষ্পিতা কোনো শব্দ করছে নাকোলে নেয়ার পর থেকে আমার গলা জড়িয়ে আছেমুখের তিকে তাকালে মনে হচ্ছে ভয় পেয়েছে,মাথায় কিছু আসছে নাআবার খালেদের রুমে গেলামখালেদের রুমে কোনো পোশাক পরিচ্ছদ নেই তার মানে খালেদ চলে গিয়েছেসঙ্গে ইমুও... 
আর ভাবতে পারছি নামাথা ঝিমঝিম করছে টেবিলের ওপর সিগারেটের প্যাকেট পড়ে আছে। খালেদ ভুল করে রেখে গেছেপ্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে জ্বালালাম,দুটো টান দেয়ার পর কাশি লাগার মতো অবস্থা হলো কটু একটা গন্ধে ভরে গেল মুখছুড়ে ফেলে দিলাম সিগারেট মোবাইলের রিং বেজে উঠলোস্ক্রিনে খালেদের নাম্বার রিসিভ করলাম কোনো কথা শোনা যাচ্ছে না কেবল শা শা শব্দ হচ্ছে অনেকক্ষণ পর ওপাশ থেকে শুনলাম আমি ইমু... বেশ রাগের স্বরে বললামকোথায় তুমি?
-
আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাওআমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু খালেদকে তোমার চেয়েও বেশি ভালোবাসি 
কি করবো বুঝতে পারলাম না,এই ছোট বাচ্চাকে আমি কিভাবে   পালন করব? সিদ্ধান্ত নিলাম ছাদ থেকে ফেলে পুষ্পিতাকে মেরে ফেলবো। সঙ্গে সঙ্গেই পুষ্পিতাকে নিয়ে ছাদে উঠলাম ,আকাশ মেঘে ঢাকা থাকার কারণে ছাদে বেশ অন্ধকারএখনো ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছেমনটাকে শক্ত করে ছাদের কানায় গিয়ে দাড়ালামএখান থেকে ফেলে পুষ্পিতাকে মেরে ফেললে কেউ টের পাবে না। পুষ্পিতা আমার গলা শক্ত করে আকড়ে ধরে আছে,আমার হাত-পা কাপছে আমি ওকে কি করে ফেলবো? চোখ বন্ধ করলামআমার বাবার মুখটা ভেসে উঠলো মনে মনে পড়লোআমি যখন ছোট তখন আমার মাও আমাকে ফেলে বাবার বন্ধুর সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিলকিন্তু আমার বাবা তো আমাকে পালন করেছেতাহলে আমি কেন পুষ্পিতাকে মেরে ফেলবোপুষ্পিতা আগের মতোই আমার গলা আকড়ে আছেওর শরীর থেকে কেমন চেনা একটা গন্ধ পাচ্ছি,এক সময় টের পেলাম পুষ্পিতার গায়ের গন্ধটা ঠিক আমার শরীরের গন্ধের মতো। ওর শরীরে যে আমারই রক্তপারলাম না ওকে ফেলতে বুকের সঙ্গে শক্ত করে চেপে ধরে বললামমারে তোর মা তোকে ছেড়ে চলে গেলেও আমি তোকে ছেড়ে কখনো যাবো না তুই যে আমার সন্তানআমার মেয়ে। কেদে ফেললামইমুকে হারানোর জন্য নয়পুষ্পিতার জন্য। বর্ষার এ ঝিরঝিরে বৃষ্টির সঙ্গে আমার চোখের বৃষ্টি মিশে গাল বেয়ে পড়ছে নিচে।  
Read More »

আজ ঘুম ভাঙলো মোবাইলের রিংটোনের শব্দে। ঘুমচোখেই সেটা কানে ধরলাম।
‘হ্যালো, ভাইয়া!’
‘হ্যাঁ, রায়হান— বলো।’
‘আপনার আইডি ঠিক করে ফেলেছি!’
কেনো জানি নে— আমার চোখ ভিজে উঠলো। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। আমি যেনো হঠাৎ দেখতে পেলাম— আমার বাবা বারান্দায় বসে আছেন, মা-ও তাঁর পাশে বসা। ঝম ঝম করে বৃষ্টি হচ্ছে। সেই বৃষ্টিতে ভিজে জবজবে হয়ে দুইটা ছেলে তাঁদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। একটাকে তাঁরা চেনেন, একটাকে চেনেন না।
চেনাটা অচেনাটাকে দেখিয়ে বললো, ‘আব্বা, এই দেখো তোমাদের আরেকটা ছেলে।’
একটু পরেই দেখা গেলো— চেনা ছেলেটা বৃষ্টিতেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজছে। অচেনাটা তার পাশে নেই! অচেনাটা বারান্দায়! তার ভেজা মাথাটা অস্থির— তোয়ালেসহ মায়ের চুড়ি পরা হাত দু’টো মিষ্টি সুরে ব্যস্ত ভারী!
চেনা-অচেনা ছেলে দু’টো আর কেউ না— একটা আমি, আরেকটা হলো রায়হান ( Raihan Babu)।
.
আজ এমন বাদল দিনে বাবা-মায়ের বেঁচে থাকাটা খুব জরুরি ছিলো।
Read More »